November 23, 2024, 9:27 am
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ‘ও কত দিন খায় নাই। আমি অহন কেমনে খামু। আমি কিচ্ছু খামুনা। আয়-হায় আল্লাহ গো, আমার মাইয়ারে অহন কে দেখব? কে আমার মাইয়ারে স্কুলে নিয়া যাইব। গত শুক্রবার ইলিশ মাছ দিয়া ওর নানায় ওরে ভাত খাওয়াইছিল। ওই খাওনই বাড়িতে ওর শেষ খাওন হয়া গেছে। ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের স্ত্রী এভাবেই আক্ষেপ করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। শুক্রবার নিহত নুরে আলমের স্ত্রী সিফাতকে সান্তনা দিতে সদর উপজেলার চরনোয়াবাদ এলাকায় যান ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ।
এসময় নুরে আলমের স্ত্রীর কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বিলাপ করে সিফাত বলতে থাকেন, ‘কে আমারে দেইখা রাখব। আমারে কার কাছে রাইখা গেলা। আমার লাইগা কে বইয়া থাকব। তোমারে ছাড়া কোনো দিন একলা ভাত খাই নাই।
আমি হাসলে তুমি খালি কইতা আমি এত হাসি কেন। তুমি আমার চোখে অহন খালি পানি দিয়া কই গেলা?
আয়-হায় আল্লাহ গো, তুমি কি করলা আমারে। শুধু রাজনীতিই ছিল ওর নেশা। রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না। রাজনীতিই ওরে শেষ কইরা দিল। নুরে আলমের স্ত্রীকে সান্ত¡না দিতে আসা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘আপনার কোনো চিন্তা নেই। আপনার ও আপনার মেয়ের ভবিষ্যৎ বিএনপি এবং দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেখবেন। নুরে আলমের বোন মোরশেদা বেগম বলেন, ‘নুরে আলমের স্বপ্ন ছিল তাঁর স্ত্রী সিফাত কোনো একদিন ব্যাংকে চাকরি করবে।
সিফাত ভোলা সরকারি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে এমএ পাস করেছেন। ওদের পাঁচ বছরের একমাত্র মেয়ে আফরাও খুব মেধাবী। সে ওই এলাকার আনাছ বিন মালেক (রাঃ) ইসলামিক কমপ্লেক্সে (মাদ্রাসা) নার্সারিতে পড়ছে।’ এ বিষয়ে আনাছ বিন মালেক (রাঃ) ইসলামিক কমপ্লেক্সের আরবি বিষয়ের শিক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, নুরে আলমের মেয়ে আফরা এ মাদ্রাসাতেই নার্সারিতে পড়ছে, সে মেধাবী।
কোরআন, আরবি, ইসলাম শিক্ষা, বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কসহ সব বিষয়ে ১০০ নম্বর পেয়েছে। মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক হেলাল উদ্দিন বিপ্লবী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আফরা এ মাদ্রাসায় যত দিন পড়তে চায় পড়বে। এমনকি আর্থিক সংকট কিংবা কোনো কারণে যদি আফরার পড়ালেখা করাতে সমস্যা হয় তাহলে বিনা বেতনে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার পড়ালেখা চালিয়ে যাবে।’ উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ভোলা জেলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরে আলম। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকার কমফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার তাঁর মৃত্যু হয়।
Leave a Reply